Site icon islamtak.in

صراط الذين أنعمت عليهم غير المغضوب عليهم ولا الضالين Quran in Bangla

صِرَٰطَ ٱلَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ ٱلْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا ٱلضَّآلِّينَ ٧

তাদের পথ, যাদের প্রতি আপনি অনুগ্রহ করেছেন। তাদের পথে নয়, যাদের প্রতি আপনার গযব বর্ষিত হয়েছে, তাদের পথও নয় যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। আমীন!!

Sheikh Mujibur Rahman

صِرَٰطَ ٱلَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ ٱلْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا ٱلضَّآلِّينَ meaning in Bangla translation or tafsir

Previous.    Surat ul Fatiha.      Next

Tafseer Abu Bakr Zakaria Quran Surat ul Fatiha in Bangla

صِرَٰطَ ٱلَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ ٱلْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا ٱلضَّآلِّينَ

তাদের পথ, যাদেরকে আপনি নিয়ামত দিয়েছেন [১], যাদের উপর আপনার ক্রোধ আপতিত হয়নি [২] এবং যারা পথভ্রষ্টও নয় [৩]

[১] এটা আল্লাহ্‌র নির্ধারিত সঠিক ও দৃঢ় পথের প্রথম পরিচয়। এর অর্থ এই যে, আল্লাহ্‌র নিকট হতে যে পথ নাযিল হয়েছে, তা অনুসরণ করলে আল্লাহ্‌র রহমত ও নিয়ামত লাভ করা যায়। দ্বিতীয়তঃ তা এমন কোন পথই নয়, যাহা আজ সম্পূর্ণ নূতনভাবে পেশ করা হচ্ছে- পূর্বে পেশ করা হয় নি। বরং তা অতিশয় আদিম ও চিরন্তন পথ। মানুষের এই কল্যাণের পথ অত্যন্ত পুরাতন, ততখানি পুরাতন যতখানি পুরাতন হচ্ছে স্বয়ং মানুষ। প্রথম মানুষ হতেই এটা মানুষের সম্মুখে পেশ করা হয়েছে, অসংখ্য মানুষ এ পথ প্রচার করেছেন, কবুল করার আহবান জানিয়েছেন, এটা বাস্তবায়িত করার জন্য প্রাণপণ সংগ্রাম করেছেন এবং শেষ পর্যন্ত তারা আল্লাহ্‌র নিকট হতে, অপূর্ব নিয়ামত ও সম্মান লাভের অধিকারী প্রমাণিত হয়েছেন। এই নিয়ামত এই দুনিয়ার জীবনেও তারা পেয়েছেন, আর আখেরাতেও তা তাদের জন্য নির্দিষ্ট হয়ে রয়েছে। মূলতঃ আল্লাহ্‌র নিয়ামতপ্রাপ্ত লোকদের চলার পথ ও অনুসৃত জীবনই হচ্ছে বিশ্ব মানবতার জন্য একমাত্র পথ ও পন্থা। এতদ্ব্যতীত মানুষের পক্ষে গ্রহণযোগ্য, অনুসরণীয় ও কল্যাণকর পথ আর কিছুই হতে পারে না। কিন্তু আল্লাহ্‌র অনুগ্রহপ্রাপ্ত লোক কারা এবং তাদের পথ বাস্তবিক পক্ষে কি? এর উত্তর অন্য আয়াতে এসেছে, “যা করতে তাদেরকে উপদেশ দেয়া হয়েছিল তারা তা করলে তাদের ভাল হত এবং চিত্তস্থিরতায় তারা দৃঢ়তর হত। এবং তখন আমি আমার কাছ থেকে ‘তাদেরকে নিশ্চয় মহাপুরস্কার প্রদান করতাম এবং তাদেরকে নিশ্চয় সরল পথে পরিচালিত করতাম। আর কেউ আল্লাহ্‌ এবং রাসুলের আনুগত্য করলে সে নবী, সত্যনিষ্ঠ, শহীদ ও সৎকর্মপরায়ণ (যাদের প্রতি আল্লাহ্‌ অনুগ্রহ করেছেন) তাদের সঙ্গী হবে এবং তারা কত উত্তম সঙ্গী! এগুলো আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ। সর্বজ্ঞ হিসেবে আল্লাহ্‌ই যথেষ্ট ” [সূরা আন-নিসাঃ ৬৬-৭০] এ আয়াত থেকে সঠিক ও দৃঢ় জীবন পথ যে কোনটি আর আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ প্রাপ্ত লোকগণ যে কোন পথে চলেছেন ও চলে আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ পাবার অধিকারী হয়েছেন তা সুস্পষ্ট ও বিস্তারিতভাবে জানা যায়। তারা হচ্ছেন আম্বিয়া, সিদ্দীক, শহীদ ও সালেহীন। [ইবন কাসীর][২] এটা আল্লাহ্‌র নির্ধারিত ‘সিরাতুল মুস্তাকীম’ এর দ্বিতীয় পরিচয়। আল্লাহ্‌ তা’আলা যে পথ মানুষের সম্মুখে চিরন্তন কল্যাণ লাভের জন্য উপস্থাপিত করেছেন সে পথ অভিশাপের পথ নয় এবং সে পথে যারা চলে তাদের উপর কখনই আল্লাহ্‌র অভিশাপ বর্ষিত হতে পারে না। সে পথ তো রহমতের পথ বরং সে পথের পথিকদের প্রতি দুনিয়াতে যেমন আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ ও সাহায্য বর্ষিত হয়ে থাকে, আখেরাতেও তারা আল্লাহ্‌র চিরস্থায়ী সন্তোষ লাভের অধিকারী হবে। এই আয়াতাংশের অপর একটি অনুবাদ হচ্ছে, “তাদের পথ নয় যাদের উপর আল্লাহ্‌র অভিশাপ নাযিল হয়েছে। ” এরূপ অনুবাদ করলে তাতে ‘সিরাতুল মুস্তাকীম’ ছাড়া আরও একটি পথের ইঙ্গিত মানুষের সামনে উপস্থাপিত হয়, যা আল্লাহ্‌র নিকট হতে অভিশপ্ত এবং সেই পথ হতে মানুষকে রক্ষা করাই এর উদ্দেশ্য মনে হয়। কিন্তু এখানে আল্লাহ্‌ মূলতঃ একটি পথই উপস্থাপিত করেছেন এবং একটি পথেরই ইতিবাচক দুইটি বিশেষণ দ্বারা সেটাকে অত্যধিক সুস্পষ্ট করে তুলেছেন। তাই অনেকেই পূর্বোক্ত প্রথম অনুবাদটিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। উভয় অর্থের জন্য [দেখুন, যামাখশারী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

প্রথম অনুবাদ বা দ্বিতীয় অনুবাদ যাই হোক না কেন এখানে একথা স্পষ্ট হচ্ছে যে, আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমানদার লোকদেরকে প্রকারান্তরে এমন পথ ও পন্থা গ্রহণ হতে বিরত থাকবার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে, যা আল্লাহ্‌র অভিশাপের পথ, যে পথে চলে কোন কোন লোক অভিশপ্ত’ হয়েছে।

কিন্তু সে অভিশপ্ত কারা, কারা কোন পথে চলে আল্লাহ্‌র নিকট হতে অভিশপ্ত হয়েছে, তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া আবশ্যক। কুরআন মাজীদ ঐতিহাসিক জাতিদের সম্পর্কে উল্লেখ করতে গিয়ে বলা হয়েছেঃ “আর তাদের উপর অপমান লাঞ্ছনা ও দারিদ্র্যের কষাঘাত হানা হয়েছে এবং তারা আল্লাহ্‌র অভিশাপ প্রাপ্ত হয়েছে। ” [সূরা আল-বাকারাহ: ৬১]

পূর্বাপর আলোচনা করলে নিঃসন্দেহে এটা বুঝতে পারা যায় যে, এ কথাটি ইয়াহুদীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে। তাই ‘মাগদুব’ বলতে যে এখানে ইয়াহুদীদের বুঝানো হয়েছে, সে বিষয়ে সমস্ত মুফাসসিরই একমত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসেও অনুরূপ স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে [দেখুন, মুসনাদে আহমাদ ৫/৩২,৩৩][৩] এটি ‘সিরাতুল মুস্তাকীম’-এর তৃতীয় ও সর্বশেষ পরিচয়। অর্থাৎ যারা সিরাতুল মুস্তাকীম এ চলে আল্লাহ্‌র নিয়ামত লাভ করতে পেরেছেন তারা পথভ্রষ্ট নন-কোন গোমরাহীর পথে তারা চলেন না। পূর্বোল্লেখিত আয়াতের ন্যায় এ আয়াতেরও অন্য অনুবাদ হচ্ছে, ‘তাদের পথে নয় যারা পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে, যারা গোমরাহ হয়ে আল্লাহ্‌র উপস্থাপিত পথ হতে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস থেকে এ পথ-ভ্ৰষ্ট লোকদের পরিচয় জানতে পারা যায় যে, দুনিয়ার ইতিহাসে নাসারাগণ হচ্ছে কুরআনে উল্লেখিত এ গোমরাহ ও পথ-ভ্ৰষ্ট জাতি। [মুসনাদে আহমাদ: ৫/৩২,৩৩, ৭৭]

কোন মুসলিম যখন সূরা ফাতিহা পাঠ করে, তখন সে প্রকারান্তরে এ কথাই ঘোষণা করে যে, “হে আল্লাহ্‌ আমরা স্বীকার করি, আপনার সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে যে জীবন-ধারা গড়ে উঠে তা-ই একমাত্র মুক্তির পথ। এজন্য আপনার নির্ধারিত এ পথে চলে যারা আপনার নিয়ামত পেয়েছেন সেই পথই একমাত্র সত্য ও কল্যাণের পথ, আল্লাহ্‌ সেই পথেই আমাদেরকে চলবার তাওফীক দিন। আর যাদের উপর আপনার অভিশাপ বর্ষিত হয়েছে ও যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে তাদের যেন আমরা অনুসরণ না করি। কেননা, সে পথে প্রকৃতই কোন কল্যাণ নেই। ” বস্তুতঃ পবিত্র কুরআন দুনিয়ার বর্তমান বিশ্বমানবতার সর্বশ্রেষ্ঠ ও একমাত্র সর্বশেষ আল্লাহ্‌র দেয়া গ্রন্থ। এর উপস্থাপিত আদর্শ ও জীবন পথই হচ্ছে বিশ্বমানবতার একমাত্র স্থায়ী ও কল্যাণের পথ। এর বিপরীত সমস্ত জীবনাদর্শকে মিথ্যা প্রমাণ করে একমাত্র এরই উপস্থাপিত আদর্শের ভিত্তিতে নিজেদেরকে গঠন করা মুসলিমদের একমাত্র দায়িত্ব। মুসলিমরা আজও সেই দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ হলে সূরা আল-ফাতিহা তাদের জীবনে সার্থক হবে।

মূলতঃ যারা সূরা আল-ফাতিহার অর্থ বুঝে সূরা আল-ফাতিহা পাঠ শেষ করার পর তাদের মন থেকে দো’আ করবে, আল্লাহ্‌ তা’আলা তাদের দো’আ কবুল করবেন। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,(اِذا قَالَ الْاِمَامُ غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ، فَقُوْلُوْ اٰمِيْنَ، فَمَنْ وَافَقَ قَوْلُهٗ قَوْلَ الْمَلَائِكَةِ غُفِرَ لَهٗ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِه)

“যখন ইমাম ‘গাইরিল মাগদূবি ‘আলাইহিম ওয়ালাদ দ্বল্লীন’ বলে তখন তোমরা ‘আমীন’ বা ‘হে আল্লাহ্‌ কবুল কর’ একথাটি বল; কেননা যার কথাটি ফেরেশতাদের কথা অনুযায়ী হবে তার পূর্বেরগুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে “[বুখারী ৭৮২,মুসলিম: ৪০৯l

অন্য বর্ণনায় এসেছে,

(وَاِذا قَالَ: غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ، فَقُوْلُوْ اٰمِيْنَ، يُجِيْبُكمُ اللّٰهُ)

“যখন ‘ইমাম গাইরিল মাগদূবি ‘আলাইহিম ওয়ালাদ দ্বল্লীন’ বলে তখন তোমরা ‘আমীন’ বা ‘হে আল্লাহ্‌ কবুল কর’ একথাটি বল; এতে আল্লাহ্‌ তোমাদের আহবানে সাড়া দিবেন (দো’আ কবুল করবেন) “[মুসলিম: ৪০৪]

অন্য এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

(مَا حَسَدَتْكُمْ اليَهُوْدُ عَلَى شَيئٍ مَا حَسَدَ تْكُمُ عَلَى السَّلَامِ وَالتَّأْمِيْنِ)

“ইয়াহুদীরা তোমাদেরকে তোমাদের ‘সালাম’ ও ‘আমীন’ বলার চেয়ে বেশী কোন বিষয়ের উপর হিংসা করে না।” [ইবনে মাজাহঃ ৮৫৬]

Tafseer Ahsan ul Bayan Quran in Bangla Surat ul Fatiha

صِرَٰطَ ٱلَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ ٱلْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا ٱلضَّآلِّينَ

তাদের পথ — যাদেরকে তুমি নিয়ামত দান করেছ;[১] তাদের পথ — যারা ক্রোধভাজন (ইয়াহুদী) নয় এবং যারা পথভ্রষ্টও (খ্রিষ্টান) নয়। [২] (আমীন)

[১] এ হল ‘স্বিরাত্বে মুস্তাক্বীম’ তথা সরল পথের ব্যাখ্যা। অর্থাৎ, সেই সরল পথ হল ঐ পথ, যে পথে চলেছেন এমন লোকেরা যাঁদেরকে তুমি নিয়ামত, অনুগ্রহ ও পুরস্কার দান করেছ। আর নিয়ামত ও পুরস্কারপ্রাপ্ত দলটি হল নবী, শহীদ, চরম সত্যবাদী (নবীর সহচর) এবং নেক লোকদের দল। যেমন আল্লাহ সূরা নিসার মধ্যে বলেছেন, “আর যে কেউ আল্লাহ এবং রসূলের আনুগত্য করবে (শেষ বিচারের দিন) সে তাদের সঙ্গী হবে, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন; অর্থাৎ নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীলগণ। আর সঙ্গী হিসাবে এরা অতি উত্তম।।” (সূরা নিসা ৪:৬৯) এই আয়াতে এ কথাও পরিষ্কার ক’রে বলে দেওয়া হয়েছে যে, পুরস্কারপ্রাপ্ত এই লোকদের পথ হল আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্যের পথ, অন্য কোন পথ নয়।[২] কোন কোন বর্ণনা দ্বারা সুসাব্যস্ত যে, مَغْضُوْبٌ عَلَيْهِمْ (ক্রোধভাজনঃ যাদের উপর আল্লাহর গযব নাযিল হয়েছে তারা) হল ইয়াহুদী। আর ضَالِّيْنَ (পথভ্রষ্ট) বলতে খ্রিষ্টানদেরকে বুঝানো হয়েছে। ইবনে আবী হাতেম বলেন, মুফাসসিরীনদের মধ্যে এ ব্যাপারে কোন মতভেদ নেই যে, {المَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ} হল ইয়াহুদীরা এবং{الضَّالِّينَ} হল খ্রিষ্টানরা। (ফাতহুল ক্বাদীর) তাই সঠিক পথে চলতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য অত্যাবশ্যক হল যে, তারা ইয়াহুদী এবং খ্রিষ্টান উভয় জাতিরই ভ্রষ্টতা থেকে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখবে। ইয়াহুদীদের সব থেকে বড় ভ্রষ্টতা এই ছিল যে, তারা জেনে-শুনেও সঠিক পথ অবলম্বন করেনি। তারা আল্লাহর আয়াতসমূহের বিকৃতি ও অপব্যাখ্যা করতে কোন প্রকার কুণ্ঠাবোধ করতো না। তারা উযাইর (আঃ)-কে আল্লাহর পুত্র বলতো। তাদের পন্ডিত ও সাধু-সন্নাসীদের হালাল ও হারাম করার অধিকার আছে বলে মনে করতো। আর খ্রিষ্টানদের সব থেকে বড় ত্রুটি এই ছিল যে, তারা ঈসা (আঃ)-এর ব্যাপারে বাড়াবাড়ি ক’রে তাঁকে আল্লাহর পুত্র এবং তিনের এক সাব্যস্ত করেছে। দুঃখের বিষয় যে, উম্মাতে মুহাম্মাদিয়ার মধ্যেও এই ভ্রষ্টতা ব্যাপক রূপ ধারণ করেছে। যার কারণে তারা দুনিয়াতে লাঞ্ছিত এবং ঘৃণিত হচ্ছে। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ভ্রষ্টতার গহ্বর থেকে বের করুন; যাতে তারা অবনতি ও দুর্দশার বর্ধমান অগ্নিগ্রাস থেকে সুরক্ষিত থাকে।সূরা ফাতিহার শেষে ‘আ-মীন’ বলার ব্যাপারে নবী করীম (সাঃ) খুব তাকীদ করেছেন এবং তার ফযীলতও উল্লেখ করেছেন। কাজেই ইমাম এবং মুক্তাদী সকলের ‘আ-মীন’ বলা উচিত। নবী করীম (সাঃ) এবং তাঁর সাহাবাগণ জেহরী (সশব্দে পঠনীয়) নামাযগুলোতে উচ্চস্বরে এমন ভাবে ‘আ-মীন’ বলতেন যে, মসজিদ গমগম করে উঠত। (ইবনে মাজা-ইবনে কাসীর) বলাই বাহুল্য যে, উঁচু শব্দে ‘আ-মীন’ বলা নবী করীম (সাঃ)-এর সুন্নত এবং সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-দের কৃত আমল।

আ-মীনের কয়েকটি অর্থ বলা হয়েছে। যেমনঃ (كَذَلِكَ فَلْيَكُنْ) এই রকমই হোক। (لاَ تُخَيِّبْ رَجَآءَنَا) আমাদের আশা ব্যর্থ করো না। (اللَّهُمَّ اسْتَجِبْ لَنَا) হে আল্লাহ! আমাদের দুআ কবুল কর।

(Tafsir Ibn kaseer) Quran Surat ul Fatiha in Bangla

صِرَٰطَ ٱلَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ ٱلْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا ٱلضَّآلِّينَ

You are reading a tafsir for the group of verses 1:6 to 1:7

ٱهْدِنَا ٱلصِّرَٰطَ ٱلْمُسْتَقِيمَ ٦صِرَٰطَ ٱلَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ ٱلْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا ٱلضَّآلِّينَ ٧

৬-৭ নং আয়াতের তাফসীরএর বর্ণনা পূর্বেই গত হয়েছে যে, বান্দার এ কথার উপর মহান আল্লাহ বলেন, এটা আমার বান্দার জন্যে এবং আমার বান্দার জন্যে ঐ সব কিছুই রয়েছে যা সে চাইবে।’ এ আয়াতটি সীরাতে মুসতাকীমের তাফসীর এবং ব্যাকরণবিদ বা নাহ্বীদের নিকট এটা ‘সীরাতে মুসতাকীম’ হতে বদল হয়েছে এবং আত বায়ানও হতে পারে। আল্লাহ তা’আলাই এ সম্পর্কে সবচাইতে ভাল জানেন। আর যারা আল্লাহর পুরস্কার লাভ করেছে তাদের বর্ণনা সূরা-ই-নিসার মধ্যে এসেছে। ইরশাদ হচ্ছেঃ (আরবি)অর্থাৎ ‘এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও রাসূলের অনুগত হয়, এরূপ ব্যক্তিগণও ঐ মহান ব্যক্তিগণের সহচর হবেন যাদের প্রতি আল্লাহ তা’আলা অনুগ্রহ করেছেন, অর্থাৎ নবীগণ, সিদ্দীকগণ, শহীদগণ ও নেক্কারগণ। আর ঐ মহাপুরুষগণ উত্তম সহচর। এ অনুগ্রহ আল্লাহর পক্ষ হতে এবং সর্বজ্ঞ হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।’ (৪:৬৯-৭০) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ “হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ঐ সব ফেরেশতা, নবী, সিদ্দীক, শহীদ এবং সৎলোকের পথে পরিচালিত করুন যাদেরকে আপনি আপনার আনুগত্য ও ইবাদতের কারণে পুরস্কৃত করেছেন।” উল্লিখিত আয়াতটি নিম্ন বর্ণিত আয়াতের মত। (৪:৬৯) (আরবি)হযরত রাবী’ বিন আনাস (রাঃ) বলেন যে, এর অর্থ হচ্ছে নবীগণ। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) ও হযরত মুজাহিদ (রঃ) এর অর্থ নিয়েছেন মুমিনগণ’ এবং হযরত অকী (রঃ) নিয়েছেন মুসলমানগণ।’ আবদুর রহমান (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে রাসূলুল্লাহ (সঃ) ও তাঁর সহচরবর্গ (রাঃ)। হযরত ইবনে আব্বাসের (রাঃ) কথাই বেশী ব্যাপক। আল্লাহ তা’আলাই এ ব্যাপারে সবচেয়ে ভাল জানেন (আরবি) এই নামক শব্দটিতে জমহুরের পঠনে (আরবি) (গাইরি) আছে অর্থাৎ (আরবি) অক্ষরের নীচে ‘যের ‘ এবং তা বিশেষণ করা হয়েছে।আল্লামা যামাখশারী বলেছেন যে, (আরবি) কে যবরের সঙ্গে পড়া হয়েছে এবং তা ‘হাল হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) এবং হযরত উমার বিন খাত্তাবের (রাঃ) পঠন এটাই (আরবি) এর সর্বনামটি ওর (আরবি) এবং হচ্ছে (আরবি), তাহলে অর্থ হচ্ছেঃ “হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে সরল সোজা পথ প্রদর্শন করুন, ঐ সব লোকের পথ যাদেরকে আপনি পুরস্কৃত করেছেন, যারা হিদায়াত বা সুপথ প্রাপ্ত এবং অটল অবিচলিত ছিলেন এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সঃ) অনুগত ছিলেন। যারা আল্লাহর নির্দেশ পালনকারী ও নিষিদ্ধ কাজ হতে দূরে-বহুদূরে অবস্থানকারী ছিলেন। আর ঐ সব লোকের পথ হতে রক্ষা করুন যাদের উপর আপনার ধূমায়িত ক্রোধ ও অভিশাপ বর্ষিত হয়েছে, যারা সত্যকে জেনে শুনেও তা থেকে দূরে সরে গেছে এবং পথভ্রষ্ট লোকেদের পথ হতেও আমাদেরকে বাঁচিয়ে রাখুন যাদের সঠিক পথ সম্পর্কে কোন ধারণা ও জ্ঞানই নেই, যারা পথভ্রষ্ট হয়ে লক্ষ্যহীনভাবে ইতস্ততঃ ঘুরে বেড়ায় এবং তাদেরকে সরল, সঠিক পুণ্য পথ দেখানো হয় না।কথার মধ্যে খুব বেশী গুরুত্ব আনয়নের জন্যে (আরবি) অক্ষরটিকে (আরবি) এর পরে আনা হয়েছে, যেন জানতে পারা যায় যে, এখানে ভুলপথ দুইটি। একটি ইয়াহূদীদের পথ এবং অপরটি খৃষ্টানদের পথ। কোন কোন নাবী বা ব্যাকরণবিদ বলেছেন যে, এখানে (আরবি) শব্দটি (আরবি) বা প্রভেদ সৃষ্টির জন্যে এসেছে। তা হলে এটা (আরবি) হতে পারে। কেননা যাদের উপর অনুগ্রহ করা হয়েছে তাদের মধ্য হতে এ (আরবি) হচ্ছে অথচ এরা তাদের অন্তর্ভুক্তই ছিল না। কিন্তু আমরা যে তাফসীর করেছি এটাই বেশী উত্তম। আরব কবিদের কবিতায় এরূপ দেখা যায় যে, তারা বিশেষ্যকে লোপ করে শুধুমাত্র বিশেষণের বর্ণনা দিয়ে থাকেন। যেমন নিম্নের কবিতায় রয়েছেঃ(আরবি)এখানে (আরবি) শব্দের আগে (আরবি) নামক বিশেষ্যটিকে সোপ করা হয়েছে এবং পরবর্তী পর্যায়ের বিশেষণকে যথেষ্ট মনে করা হয়েছে। এভাবেই আয়াতেও বিশেষণের বর্ণনা রয়েছে এবং (আরবি)-নামক বিশেষ্যকে লোপ করা হয়েছে (আরবি) এর ভাবার্থ হচ্ছে (আরবি) অর্থাৎ অভিশপ্তদের পথে নয় (আরবি) এর উল্লেখ না করে (আরবি) এর উল্লেখই যথেষ্ট মনে করা হয়েছে। পূর্ব শব্দগুলিই এটা প্রমাণ করছে। পূর্বে এ শব্দটি দুইবার এসেছে। কেউ কেউ বলেন যে (আরবি) এর শব্দটি অতিরিক্ত। তাদের মতে বাক্যটি হবে নিম্নরূপঃ (আরবি) এবং আরব কবিদের কবিতাতেও এর সাক্ষ্য রয়েছে। যেমন কবি আজ্জাজ বলেনঃ (আরবি)এখানে (আরবি) শব্দটি অতিরিক্ত। কিন্তু সঠিক কথা সেইটাই যা আমরা ইতিপূর্বে লিখেছি। হযরত উমার বিন খাত্তাব (রাঃ) হতে সহীহ সনদে (আরবি) পড়াও বর্ণিত আছে। আবু উবাইদ আল কাসেম বিন সাল্লাম “কিতাবু ফাযাইলিল কুরআন’ এর মধ্যে একথা বর্ণনা করেছেন। হযরত উবাই বিন কা’ব (রাঃ) হতেও এরূপ বর্ণিত আছে। এ মহান ব্যক্তিদ্বয় হতে যদি এটা ব্যাখ্যাদান রূপেও প্রকাশ পেয়ে থাকে তবে তো এটা আমাদের মতেরই সহায়ক হবে। তা হলো এই যে, (আরবি) কে (আরবি) এর জন্যে আনা হয়েছে, যাতে এ সন্দেহ না থাকে যে, এটা (আরবি) এর (আরবি) উপর হয়েছে এবং এ জন্যেও যে, যাতে দুইটি পথের পার্থক্য অনুধাবন করা যায়, যেন প্রত্যেকেই এ দুটো পথ থেকে বেঁচে থাকে। ঈমানদারদের পন্থা তো এটাই যে, সত্যের জ্ঞানও থাকতে, হবে এবং তার আমলও থাকতে হবে। ইয়াহূদীদের আমল নেই এবং খৃষ্টানদের জ্ঞান নেই। এজন্যেই ইয়াহূদীরা অভিশপ্ত হলো এবং খৃষ্টানেরা হলো পথভ্রষ্ট।এজন্যেই ইয়াহূদীরা অভিশপ্ত হলো এবং খৃষ্টানেরা হলো পথভ্রষ্ট। কেননা, জেনে শুনে ইচ্ছাকৃতভাবে আমল পরিত্যাগ করা লা’নত বা অভিশাপের কারণ হয়ে দাড়ায়। খৃষ্টানেরা যদিও একটা জিনিসের ইচ্ছে করে, কিন্তু তার সঠিক পথ তারা পায় না। কেননা, তাদের কর্মপন্থা ভুল এবং তারা সত্যের অনুসরণ হতে দূরে সরে পড়েছে। অভিশাপ ও পথভ্রষ্টতা এই দুই দলের তো রয়েছেই কিন্তু ইয়াহুদী অভিশাপের অংশে একধাপ এগিয়ে রয়েছে। যেমন কুরআন কারীমে রয়েছেঃ (আরবি)অর্থাৎ এরা পূর্ব হতেই পথভ্রষ্ট এবং অনেককেই পথভ্রষ্ট করেছে এবং তারা সোজা পথ হতে ভ্রষ্ট রয়েছে। (৫:৭৭) একথার সমর্থনে বহু হাদীস ও বর্ণনা পেশ করা যেতে পারে। মুসনাদ-ই-আহমাদে আছে যে, হযরত আদী বিন হাতিম (রাঃ) বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর সেনাবাহিনী একদা আমার ফুফুকে এবং কতকগুলো লোককে বন্দী করে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট এনে হাজির করেন। আমার ফুফু তখন বলেনঃ “আমাকে দেখা শোনা করার লোক দূরে সরে রয়েছে এবং আমি একজন অধিক বয়স্কা অচলা বৃদ্ধা। আমি কোন খিদমতের যোগ্য নই। সুতরাং দয়া করে আমাকে ছেড়ে দিন। আল্লাহ আপনার উপরও দয়া করবেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “যে তোমার খবরাখবর নিয়ে থাকে সে ব্যক্তিটি কে?’ তিনি বললেন-আদী বিন হাতিম।’ রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “সে কি ঐ ব্যক্তি যে আল্লাহ ও তার রাসূল (সঃ) হতে এদিক ওদিক পালিয়ে বেড়াচ্ছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বিনা শর্তে মুক্তি দিয়ে দেন। তারপর যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) ফিরে আসেন তখন তার সাথে আর একটি লোক ছিলেন। খুব সম্ভব তিনি হযরত আলীই (রাঃ) ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ যাও, তার কাছে গিয়ে সোয়ারীর প্রার্থনা কর।” আমার ফুফু তাঁর কাছে প্রার্থনা জানালে সঙ্গে সঙ্গে তা মঞ্জুর হয় এবং তিনি সোয়ারী পেয়ে যান। তিনি এখান হতে মুক্তি লাভ করে সোজা আমার নিকট চলে আসেন এবং বলেনঃ রাসূলুল্লাহর (সঃ) দানশীলতা তোমার পিতা হাতিমকেও ছাড়িয়ে গেছে। তার কাছে একবার কেউ গেলে আর শূন্য হস্তে ফিরে আসে না।’ একথা শুনে আমিও রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর খিদমতে হাজির হই। আমি দেখি যে, ছোট ছেলে ও বৃদ্ধা স্ত্রীলোকেরা তাঁর কাছে অবাধে যাতায়াত করছে এবং তিনি তাদের সাথে অকুণ্ঠচিত্তে অকৃত্রিমভাবে আলাপ আলোচনা করছেন। এ দেখে আমার বিশ্বাস হলো যে, তিনি কাইসার ও কিসরার মত বিশাল রাজত্ব ও সম্মানের অভিলাষী নন। তিনি আমাকে দেখে বলেনঃ ‘আদী! (আরবি) বলা হতে পালিয়ে বেড়াচ্ছ কেন? আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ উপাসনার যোগ্য আছে কি? (আরবি) বলা হতে এখন তুমি মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছ কেন? মহা সম্মানিত আল্লাহ পাক থেকে বড় আর কেউ আছে কি? (তার এই কথাগুলো এবং তাঁর সরলতা ও অকৃত্রিমতা আমার উপর এমনভাবে দাগ কাটলো ও ক্রিয়াশীল হলো যে,) আমি তৎক্ষণাৎ কালেমা পড়ে মুসলমান হয়ে গেলাম। তাতে তিনি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হন এবং বলেনঃ (আরবি) দ্বারা ইয়াহূদকে বুঝানো হয়েছে এবং (আরবি) দ্বারা খৃষ্টানগণকে বুঝানো হয়েছে। আরও একটি হাদীসে আছে যে, হযরত আদীর (রাঃ) প্রশ্নের উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) এই তাফসীরই করেছিলেন। এ হাদীসের অনেক সনদ আছে এবং বিভিন্ন শব্দে সে সব বর্ণিত হয়েছে।বানূ কাইনের একটি লোক ‘ওয়াদীউল কুরায়’ রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে এটাই প্রশ্ন করেছিলেন এবং উত্তরে তিনি একথাই বলেছিলেন। কোন কোন বর্ণনায় তাঁর নাম দেয়া হয়েছে আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ)। আল্লাহ তাআলাই এ সম্পর্কে সবচেয়ে ভাল জানেন। ইবনে মিরদুওয়াই (রঃ)- এর তাফসীরে হযরত আবু যার (রাঃ) হতেও এটাই বর্ণিত আছে। হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ), হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) এবং আরও বহু সাহাবী (রাঃ) হতেও এ তাফসীর মকল করা হয়েছে। হযরত রাবী’ বিন আনাস (রাঃ) এবং হযরত আবদুর রহমান বিন যায়েদ বিন আসলাম (রঃ) প্রভৃতি মনীষীগণও একথাই বলেন। বরং ইবনে আবি হাতিম (রঃ) তো বলেন যে, মুফাসসিরগণের মধ্যে এ ব্যাপারে কোন মতভেদ নেই। এই ইমামগণের এতোফসীরের একটি দলীল হচ্ছে ঐ হাদীসটি যা ইতিপূর্বে বর্ণিত হয়েছে। দ্বিতীয় দলীল হচ্ছে সূরা-ই-বাকারার এ আয়াতটি যাতে বানী ইসরাঈলগণকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে। (২:৯০) (আরবি) এ আয়াতের মধ্যে আছে যে, তাদের উপর অভিশাপের পর অভিশাপ অবতীর্ণ। হয়েছে এবং সূরা-ই-মায়েদার (আরবি) (৫৪৬০) এই আয়াতের মধ্যেও রয়েছে যে, তাদের উপর আল্লাহর অভিশাপ অবতীর্ণ হয়েছে। অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি)অর্থাৎ বানী ইসরাঈলদের মধ্যে যারা কুফরী করেছে তাদের উপর দাউদ (আঃ) ও হযরত ঈসা (আঃ) এর কথায় অভিশাপ দেয়া হয়েছে; কারণ তারা অবাধ্য হয়েছিল ও সীমা অতিক্রম করেছিল। এসব লোক কোন খারাপ কাজ হতে একে অপরকে বাধা দিতো না। নিশ্চয়ই তাদের কাজ ছিল অত্যন্ত জঘন্য। (৫:৭৮-৭৯)ইতিহাসের পুস্তকসমূহে বর্ণিত আছে যে, যায়েদ বিন আমর বিন নোফাইল যখন খাঁটি ধর্মের অনুসন্ধানে স্বীয় বন্ধুবান্ধব ও সাথী-সঙ্গীসহ বেরিয়ে পড়লেন এবং এদিক ওদিক বিচরণের পর শেষে সিরিয়ায় আসলেন, তখন ইয়াহূদীরা তাদেরকে বললোঃ “আল্লাহর অভিশাপের কিছু অংশ না নেয়া পর্যন্ত আপনারা আমাদের ধর্মে আসতেই পারবেন না।তারা উত্তরে বললেনঃ তা হতে বাঁচার উদ্দেশ্যেই তো আমরা সত্য ধর্মের অনুসন্ধানে বের হয়েছি, কাজেই কিরূপে তা গ্রহণ করতে পারি? তারা খৃষ্টানদের সাথে সাক্ষাৎ করলে তারা বললোঃ “আল্লাহ তা’আলার লা’নত ও অসন্তুষ্টির কিছু অংশ না নেয়া পর্যন্ত আপনারা আমাদের ধর্মেও আসতে পারবেন না। তারা বললেনঃ আমরা এটাও করতে পারি না। তারপর হযরত যায়েদ বিন আমর বিন নোফাইল স্বাভাবিক ধর্মের উপরই রয়ে গেলেন। তিনি মুর্তি পূজা ও স্বগোত্রীয় ধর্মত্যাগ করলেন, কিন্তু ইয়াহুদী ও খৃষ্টান ধর্ম কোন ক্রমেই গ্রহণ করলেন না। তবে তার সঙ্গী সাথীরা খৃষ্টান ধর্ম গ্রহণ করলো, কেননা ইয়াহূদীদের ধর্মের সঙ্গে এর অনেকটা মিল ছিল। যায়েদের ধর্মেরই অন্তর্ভুক্ত ছিলেন অরাকা বিন নাওফিল। তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর নবুওতের যুগ পেয়েছিলেন এবং আল্লাহর হিদায়াত তাঁকে সুপথ প্রদর্শন করেছিল। তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর উপর ঈমান এনেছিলেন ও সেই সময় পর্যন্ত যে ওয়াহী অবতীর্ণ হয়েছিল তিনি তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছিলেন। আল্লাহ তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হউন। জিজ্ঞাস্যঃ (আরবি) এবং (আরবি)-এর মধ্যে অতি সামান্য পার্থক্য রয়েছে। এজন্যে উলামা-ই-কিরামের সহীহ মাযহাৰ এই যে, এ পার্থক্য ক্ষমার্হ (আরবি) এর সহীহ মাখরাজ হচ্ছে জিহবার প্রথম প্রান্ত এবং ওর পার্শ্বের চোয়াল। আর (আরবি) এর মাখরাজ হচ্ছে জিহবার এক দিক এবং সম্মুখের উপরের দুই দাঁতের প্রান্ত। দ্বিতীয় কথা এই যে, এই দুটি অক্ষর হচ্ছে (আরবি) এবং (আরবি) সুতরাং যে ব্যক্তির পক্ষে এই দুইটি অক্ষরের মধ্যে পার্থক্য করা কঠিন হবে সে যদি কে (আরবি) এর মত পড়ে ফেলে তবে তার অপরাধ অমার্জনীয় নয়, বরং তাকে ক্ষমা সুন্দর চোখে দেখা হবে। একটি হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ(আরবি) কে সবচেয়ে সঠিকভাবে পড়তে আমিই পারি। কিন্তু হাদীসটি সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন ও দুর্বল। পরিচ্ছেদএই কল্যাণময় ও বরকতপূর্ণ সূরাটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলীর সমষ্টি। এই সাতটি আয়াতে আল্লাহ তা’আলার যোগ্য প্রশংসা, তার শ্রেষ্ঠত্ব, পবিত্র নামসমূহ এবং উচ্চতম বিশেষণের সুন্দর বর্ণনা রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গেই রোজ কিয়ামতের বর্ণনা দেয়া হয়েছে এবং বান্দাদের প্রতি নির্দেশ রয়েছে যে, তারা যেন সেই মহান প্রভুর নিকট অত্যন্ত বিনীতভাবে যাচ্ঞা করে, যেন তার কাছে নিজের দারিদ্র ও অসহায়ত্বের কথা অকপটে স্বীকার করে, তাকে সব সময় অংশীবিহীন ও তুলনাবিহীন মনে করে, খাটি অন্তরে তাঁর ইবাদত; তাঁর অহদানিয়াত বা একত্ববাদে বিশ্বাস করে, তার কাছে সরল সোজা পথ ও তার উপর সুদৃঢ় ও অটল থাকার জন্যে নিশিদিন আকুল প্রার্থনা জানায়। এই অবিসম্বাদিত পথই একদিন তাকে রোজ কিয়ামতের পুলসিরাত পার করাবে এবং নবী, সিদ্দীক, শহীদ এবং নেককারদের পার্শ্বে জান্নাতুল ফিরদাউসের নন্দন কাননে স্থান দেবে। সাথে সাথে আলোচ্য সূরাটির মধ্যে যাবতীয় সকার্যাবলী সম্পাদনের প্রতি নিরন্তর উৎসাহ দেয়া হয়েছে যাতে কিয়ামতের দিন বান্দা আত্মকৃত নেকী ও পুন্যসমূহ সঙ্গে নিয়ে যেতে পারে এবং মিথ্যা ও অন্যায় পথে চলা থেকে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে, যাতে কিয়ামতের দিনেও সে বাতিলপন্থীদের দল থেকে দূরে থাকতে পারে। এই বাতিলপন্থী দল হচ্ছে ইয়াহূদী এবং খৃষ্টান।ধীরস্থির ও সূক্ষ্মভাবে জাগ্রত মস্তিষ্ক নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে দেখলে অতি সহজেই অনুধাবন করা যাবে যে, আল্লাহ তা’আলার বর্ণনারীতি কি সুন্দর! আলোচ্য সূরায় (আরবি) নামক বাক্যাংশে দানের ইসনাদ বা সম্পর্ক আল্লাহর দিকে করা হয়েছে এবং (আরবি) বলা হয়েছে (আরবি) কিন্তু এর ইসনাদ করা হয়নি; বরং এখানে কর্তাকেই লোপ করা হয়েছে এবং (আরবি) বলা হয়েছে। এখানে বিশ্ব প্রভুর মহান মর্যাদার প্রতি যথাযোগ্য লক্ষ্য রাখা হয়েছে। অবশ্য প্রকৃতপক্ষে মূল কর্তা আল্লাহ তা’লাই। যেমন অন্যস্থানে বলা হয়েছে (আরবি) এরূপভাবেই ভ্রষ্টতার ইসনাদ পথভ্রষ্টের দিকেই করা হয়েছে। অথচ অন্য এক জায়গায় আছেঃ (আরবি)অর্থাৎ আল্লাহ যাকে সুপথ প্রদর্শন করেন সে সুপথ প্রাপ্ত এবং যাকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন তার কোন বন্ধু ও পথ প্রদর্শক নেই।’ (১৮:১৭) আর এক জায়গায় আছে, (আরবি) অর্থাৎ আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার জন্যে কোন পথ প্রদর্শক নেই এবং সে তো স্বীয় অবাধ্যতার মধ্যে বিভ্রান্ত হয়ে ফিরছে?’ (৭:১৮৬) এ রকমই আরও বহু আয়াত রয়েছে যদ্দ্বারা একথা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে, পথ প্রদর্শনকারী ও পথ বিভ্রান্তকারী হচ্ছেন একমাত্র মহান আল্লাহ।কাদরিয়্যাহ দল, যারা কতকগুলো অস্পষ্ট আয়াতকে দলীলরূপে গ্রহণ করে বলে থাকে যে, বান্দা তার ইচ্ছাধীন ও মুক্ত স্বাধীন, সে নিজেই পছন্দ করে এবং নিজেই সম্পাদন করে। কিন্তু তাদের একথা ভ্রমাত্মক ও প্রমাদপূর্ণ। এটা খণ্ডনের জন্যে ভূরি ভূরি স্পষ্ট আয়াতসমূহ বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু বাতিল পন্থীদের এটাই রীতি যে, তারা স্পষ্ট আয়াতকে পরিহার করে অস্পষ্ট আয়াতের পিছনে লেগে থাকে। বিশুদ্ধ হাদীসে আছেঃ “যখন তোমরা ঐ লোকদেরকে দেখ যারা অস্পষ্ট আয়াতসমূহের পিছনে লেগে থাকে তখন বুঝে নিও যে, তারা ওই যাদের নাম স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা নিয়েছেন এবং স্বীয় কিতাবে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং তোমরা তাদের থেকে সতর্ক থাক। এ নির্দেশনামায় রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর ইঙ্গিত এই আয়াতের প্রতি রয়েছেঃ (আরবি)অর্থাৎ সুতরাং যাদের অন্তরে বঞতা রয়েছে তারা গোলযোগ সৃষ্টি এবং এর (মনগড়া) ব্যাখ্যা অন্বেষণের উদ্দেশ্যে এর ঐ অংশের পিছনে পড়ে থাকে যা দুর্বোধ্য ও অস্পষ্ট মর্ম বিশিষ্ট। সুতরাং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত যে, বিদআতীদের অনুকূলে কুরআন পাকের মধ্যে সঠিক ও অকাট্য দলীল একটিও নেই। কুরআন মাজীদের আগমন সূচিত হয়েছে সত্য ও মিথ্যা, হিদায়াত ও গুমরাহীর মধ্যে পার্থক্য প্রদর্শনের জন্যেই। বৈপরীত্ব ও মতবিরোধের জন্যে অসেনি বা তার অবকাশও এতে নেই। এতে মহাবিজ্ঞ ও প্রশংসিত আল্লাহ কর্তৃক অবতীর্ণ হয়েছে লাওহে মাহফু’ বা রক্ষিত ফলক থেকে।” পরিচ্ছেদসূরা ফাতিহা শেষ করে আমীন বলা মুসতাহাব (আরবি) শব্দটি (আরবি) শব্দটির মত এবং এটা (আরবি) ও পড়া হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছেঃ “ হে আল্লাহ! আপনি কবুল করুন। আমীন বলা মুসতাহাব হওয়ার দলীল হলো ঐ হাদীসটি যা মুসনাদ-ই-আহমদ, সুনান-ই-আবি দাউদ এবং জামে তিরমিযীতে হযরত অয়েল বিন হুজর (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেনঃ “আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে (আরবি) পড়ে আমীন বলতে শুনেছি। তিনি স্বর দীর্ঘ করতেন।” সুনান-ই- আবি দাউদে আছে যে, তিনি স্বর উচ্চ করতেন। ইমাম তিরমিযী (রঃ) হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। হযরত আলী (রাঃ), হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ), হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) প্রমুখ সাহাবীগণ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর সশব্দ আমীন তার নিকটবর্তী প্রথম সারির লোকেরা স্পষ্টতঃই শুনতে পেতেন। সুনান-ই-আবি দাউদ ও সুনান-ই-ইবনে মাজায় এ হাদীসটি আছে। সুনান-ই-ইবনে মাজায় এও আছে যে, আমীনের শব্দে গোটা মসজিদ প্রতিধ্বনিত হয়ে বেজে উঠতো।’ ইমাম দারে-কুতনীও (রঃ)এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং একে ‘হাসান’ বলে মন্তব্য করেছেন। হযরত বেলাল (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলতেনঃ “আমার পূর্বে ‘আমীন’ বলবে না।”হযরত হাসান বসরী (রঃ) এবং হযরত জাফর সাদিক (রঃ) হতে ‘আমীন’ বলা বর্ণিত আছে। যেমন কুরআন মজীদের মধ্যে (আরবি) (৫:২) রয়েছে। আমাদের সহচরেরা বলেন যে, নামাযের বাইরে থাকলেও ‘আমীন’ বলতে হবে। তবে যে ব্যক্তি নামাযে থাকবে তার জন্যে বেশী জোর দেয়া হয়েছে। নামাযী একাকী হোক বা মুকতাদী হোক বা ইমাম হোক, সর্বাবস্থায় তাকে আমীন বলতেই হবে। সহীহ বুখারী ও মুসলিমের মধ্যে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যখন ইমাম ‘আমীন’ বলেন তখন তোমরাও আমীন বল। যার আমীন বলার শব্দ ফেরেশতাদের আমীনের সঙ্গে মিলিত হয় তার পূর্বেকার সমস্ত পাপ মোচন হয়ে যায়।সহীহ মুসলিম শরীফে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যখন তোমাদের মধ্যে কেউ নামাযে ‘আমীন’ বলে এবং ফেরেশতারাও আকাশে ‘আমীন বলেন, আর একের আমীনের সঙ্গে অন্যের ‘আমীন মিলিত হয় তখন তার পূর্বেকার সমস্ত গোনাহ মাফ হয়ে যায়। এর ভাবার্থ এই যে, তার আমীন ও ফেরেশতাদের ‘আমীন’ বলার সময় একই হয় বা কবুল হওয়া হিসেবে অনুরূপ হয় অথবা আন্তরিকতায় অনুরূপ হয়। সহীহ মুসলিমের মধ্যে হযরত আবু মূসা আশ’আরী (রাঃ) হতে মারফু রূপে বর্ণিত আছেঃ “যখন ইমাম (আরবি) বলেন তখন তোমরা ‘আমীন’ বল, আলাহ কবুল করবেন।’ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমীনের অর্থ কি’ তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ! আপনি কবুল করুন। জওহারী (রঃ) বলেন যে, এর অর্থ হচ্ছেঃ ‘যেন এরূপই হয়।’ ইমাম তিরমিযী (রঃ)বলেন যে, এর অর্থ হচ্ছে আমাদের আশা

 

 

Exit mobile version